অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায় | ওজন কমাতে গেলে কি করতে হবে !

অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায়

অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায়

আমাদের মাঝে অনেকে রয়েছেন যাদের শরীরের উচ্চতার তুলনায় ওজন অনেক বেশি। যার ফলে BMI (Body Mass Index) ঠিক থাকে না। এতে করে শরীরে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা বাসা বাঁধে। আবার আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছন। কিন্তু অনেক পন্থা অবলম্বন করেও কোনভাবেই শরীরের ওজন কমাতে পারছেন না।


ওজন কমানো অনেকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে এই চ্যালেঞ্জটি অনেকটা সহজ হতে পারে। তাই আজকের এই টপিকটিতে আমরা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে গেলে কি করতে হবে, সে সম্পর্কে বেশিকিছু কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জানবো। যা আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন।


১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস

সঠিক খাদ্যাভাস যেমন ওজন বাড়াতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনি এটি ওজন কমাতেও বেশ সাহায্যকারী ভূমিকা পালন করে। বাহিরের প্যাকেটজাত বা খোলা জাঙ্ক ফুড আমাদের শরীরে চর্বির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই আমাদের ওজন কমাতে ও বাড়াতে সঠিক খাদ্যাভাস খুবই জরুরী।


১.১. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

আমাদের শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য প্রোটিনের কোন বিকল্প নেই। আমাদের শরীরের মাংসপেশী বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য অংশ হলো এই প্রোটিন। এটি আমাদের শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে তৃপ্তি রাখতে সাহায্য করে। যেমন: ডাল, মুরগি, মাছ, এবং ডিম।


১.২. সুষম খাবার নির্বাচন

ফল, সবজি, এবং পুরো শস্যের (whole grains) প্রতি গুরুত্ব দিন। এই ধরনের খাবার ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালোরি থাকে। সুষম খাবার নির্বাচন এবং গ্রহণ আমাদের সুস্থভাবে জীবন যাপনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


১.৩. পানির পরিমাণ বৃদ্ধি

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের বর্জ্য দূর করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। এছাড়াও পরিমাণ মতো পানি পান করা আমাদের ত্বকের কোষগুলোকে ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


২. বিভিন্ন ব্যায়াম পদ্ধতি

আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শারীরিক ব্যায়াম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো:


২.১. ইয়োগা

ইয়োগা শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য উপকারী। বিভিন্ন আসন (pose) যেমন সূর্য নমস্কার, ব্রিজ পোজ ইত্যাদি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি অতিরিক্ত ক্যালোরি কমাতে সাহায্য করে।


২.২. হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT)

নিঃসন্দেহে হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT) আমাদের শরীরের ওজন কমানোর জন্য একটি অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার। যা মানবদেহের ক্যালোরি বার্ন করে এবং বিপাকীয় উন্নতির ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা প্রদান করে।


যাইহোক, ঐতিহ্যগত কার্ডিও প্রশিক্ষণ বা আউটডোর হাঁটা সহ কার্ডিওভাসকুলার সহনশীলতা বাড়াতে পারে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমাতে পারে।


৩. পর্যাপ্ত পানি পান:

আমাদের সকলেরই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিত। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং খিদে কমায়।


তাছাড়া পর্যাপ্ত পানি শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। আবার অপরদিকে এটি ত্বক ভালো রাখতেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।


৪. নিয়মিত ঘুম:

প্রতিরাত ৭-৯ ঘণ্টা ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের অভাব হলে অথবা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মেটাবলিজমে প্রভাব ফেলতে পারে এবং ওজন বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। তাই শরীরের ভারসাম্য বা ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে ঘুম অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।


৫. মানসিক চাপ কমানো:

আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে মানসিক চাপ মুক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত টেনশন আমাদের মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। এতে করে আমাদের ব্রেন সহ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক চালনা ব্যাহত হয়। আর এটি দীর্ঘমেয়াদি হলে শরীরের ওজন কম অথবা বেশি হতে পারে। আবার স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসল বেড়ে গেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে


আর মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগ ব্যায়াম, মেডিটেশন, বা আপনার শখের কাজে সময় দিন। আবার চাইলে আপনি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ ও করতে পারেন। এতে করে আপনি অনেকটা মানসিক চাপ মুক্ত থাকবেন।


৬. খাবারের সাথে মনোযোগ দেওয়া:

ধীরগতিতে বা ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করুন এবং খাবারের প্রতি মনোযোগ দিন। খাবারের প্রতি সচেতনতা অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কমায় আর তা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।


তবে শুধুমাত্র খাবার সচেতনতারসহিত খেলেই হবে না, কি ধরনের খাবার খাচ্ছেন সেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে আর তৈলাক্ত ও প্যাকেটজাত খাবার বর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। খবরের মাঝে প্রয়োজন মাফিক লেবু রাখতে পারেন, এটি ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়ক ও কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।


মেডিকেল পরামর্শ:

প্রয়োজনে একটি ডায়েটিশিয়ান বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ অবস্থায় (যেমন থাইরয়েডের সমস্যা) মেডিকেল সহায়তা নিতে হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের প্রত্যেকেরই বছরে অন্তত দুইবার করে হলেও মেডিকেলের পরামর্শ নেয়া উচিত।


পরিশেষে

অবশেষে বলা যায় যে, উপরে যেসকল ওজন কমানোর উপায় শেয়ার করা হয়েছে, এগুলো ছাড়াও শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য আরো বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম বা উপায় রয়েছে। তবে আমরা যে উপায়গুলো শেয়ার করেছি এগুলো সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত এবং কার্যকর।


এ সকল নিয়ম নীতি মেনে জীবন যাপন করলে আমাদের মধ্যে যাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে তারা অনেকাংশে পরিত্রাণ পেতে পারেন । তাছাড়া শরীরের ওজন যদি অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং যদি তা কোনভাবে রোধ করা না যায়, তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন